
১০০ বছর বাঁচার রহস্য: চারটি সহজ অভ্যাস
প্রথমেই বলে রাখি — কে কতদিন বাঁচবে, সে রহস্য জানেন কেবল পরম সৃষ্টিকর্তা। আমরা শুধু তাঁর দানের মধ্যে থেকে সেরাটা বেছে নিতে পারি। তবে আমরা যদি কিছু ভালো অভ্যাস গড়ে তুলি, তাহলে হয়তো একটু বেশি দিন সুস্থ থেকে বাঁচতে পারবো।
ইংল্যান্ডের সারি শহরে থাকেন ১১৫ বছর বয়সী ইথেল ক্যাটারহ্যাম। তিনি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত মানুষ। এই খবর পড়ে আপনি হয়ত ভাবছেন—দাদি এত দিন বেঁচে আছেন কীভাবে? তাঁর রহস্যটা কী?
যারা ১১০ বছরের বেশি বাঁচেন, তাদের কথা সব সময় স্বাস্থ্যের জন্য নির্ভরযোগ্য নয়। কারণ তারা একটু ব্যতিক্রম। তবে গবেষণা থেকে আমরা কিছু টিপস পেতে পারি, যেগুলো দীর্ঘজীবী মানুষদের জীবনযাপন থেকে পাওয়া গেছে। এই টিপস আমাদের বেশি দিন বাঁচার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
১. শরীরচর্চা করুন
শরীরচর্চা করলে শরীর ভালো থাকে—এটা তো সবাই জানে। গবেষণা বলছে, যারা প্রতিদিন একটু-আধটু শরীরচর্চা করে, তারা বেশি দিন বাঁচে, আর সুস্থও থাকে। একটা গবেষণায় দেখা গেছে, যারা আগে কিছুই করত না, তারা যদি সপ্তাহে ৭৫ মিনিট দ্রুত হাঁটে, তাহলে তাদের জীবন দুই বছর বাড়তে পারে।
কিন্তু বেশিক্ষণ বসে থাকা কতটা খারাপ, সেটা আমরা অনেকেই জানি না। শরীরচর্চা করলেও সারাদিন বসে থাকলে তার ক্ষতি পুরোপুরি কাটানো যায় না। গবেষণা বলছে, বেশি বসে থাকলে যেকোনো কারণে আগে মারা যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
তাই বেশি দিন বাঁচতে চাইলে বেশিক্ষণ বসে থাকা বন্ধ করতে হবে। তাহলে কী করবেন?
প্রতি ৩০ মিনিট পর পর উঠে একটু দাঁড়ান, অফিসে ফোন না করে সরাসরি গিয়ে কথা বলুন, আর বাসে-ট্রেনে বসার বদলে দাঁড়িয়ে যান। এর সাথে প্রতিদিন ৩০ মিনিট একটু হাঁটাহাঁটি বা হালকা শরীরচর্চা করলে সুস্থ থাকার সম্ভাবনা অনেক বাড়বে।
২. শাকসবজি খান
ছোটবেলায় মা-বাবা যে কথাটা বলত—শাকসবজি খাও, না হলে বড় হবে না—সেটা আসলে সত্যি। বেশি দিন বাঁচতে চাইলে শাকসবজি খাওয়া জরুরি।
১০০,০০০ মানুষের উপর ৩০ বছর ধরে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত সুস্থ ছিল, তারা বেশি ফল, শাকসবজি, ডাল, বাদাম আর পুরো শস্য খেত। আর লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত মাংস, ভাজা খাবার আর মিষ্টি জিনিস কম খেত। এর মানে এই না যে তোমাকে পুরোপুরি মাংস ছেড়ে দিতে হবে। গবেষণাটা শুধু বলছে, সুস্থ থাকতে এই খাবারগুলো বেশি খাওয়া ভালো।
কখন আর কতটা খাচ্ছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। পশুদের উপর গবেষণায় দেখা গেছে, কম খাওয়া আর ফাস্টিং করলে বেশি দিন বাঁচা যায়। মানুষের উপরও কিছু গবেষণা হয়েছে। তিন সপ্তাহ ফাস্টিং করলে শরীরে ভালো পরিবর্তন দেখা গেছে, যেটা পশুদের দীর্ঘায়ুতে দেখা যায়। তবে এটা নিশ্চিত করতে আরও বড় গবেষণা দরকার।
৩. ভালো ঘুমান
ভালো আর নিয়মিত ঘুম সুস্থ থাকার জন্য খুব জরুরি।
৫ লাখ ব্রিটিশ মানুষের উপর গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ঘুমের সময় ঠিক নেই, তারা নিয়মিত ঘুমকারদের তুলনায় ৫০% বেশি আগে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। যারা রাতের শিফটে কাজ করে, তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। আর যে নার্সরা বছরের পর বছর শিফটে কাজ করে, তারা অবসরের পর কম সুস্থ থাকে আর আগে মারা যায়।
এই তথ্য বলছে, ভালো আর নিয়মিত ঘুম সুস্থ থাকার জন্য দরকার। তবে কত ঘণ্টা ঘুমানো লাগবে, আর কখন ঘুমাতে হবে—সেটা সবার জন্য আলাদা। তাই সবার জন্য একটা নির্দিষ্ট পরামর্শ দেওয়া কঠিন। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বড়দের ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
৪. মানসিক চাপ কমান
মানসিক চাপ আমাদের শরীরের উপর অনেক প্রভাব ফেলে।
যেমন, ছোটবেলায় যদি বড় ধরনের চাপ থাকে—মা-বাবা হারানো, অবহেলা বা শারীরিক নির্যাতন—তাহলে পরবর্তী জীবনে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। এমনকি শরীরের কোষ পর্যায়েও প্রভাব পড়ে, যা বুড়ো বয়সে রোগ আর আগে মারা যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
অন্যদিকে, যে বয়স্করা মানসিক চাপ ভালোভাবে সামলাতে পারে, তারা বেশি দিন বাঁচে। মাত্র ৮ সপ্তাহ নিয়মিত যোগ করলেই মানসিক শক্তি বাড়ে।
এর সাথে সামাজিক মেলামেশাও জড়িত। যারা বেশি মানুষের সাথে মিশে, তারা বেশি দিন বাঁচে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৫ বছরের বেশি বয়সী যারা প্রতিদিন মানুষের সাথে মেশে, তারা যারা একা থাকে তাদের তুলনায় ৫ বছর বেশি বাঁচার সম্ভাবনা তিন গুণ বেশি। সামাজিক সম্পর্ক আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
জিনের ভূমিকা
আমরা আমাদের জীবনযাত্রার অনেক কিছু বদলাতে পারি, কিন্তু জিনের ব্যাপারটা আমাদের হাতে নেই। গবেষণা বলছে, যারা বেশি দিন বাঁচে, তাদের জিনে কিছু বিশেষ পরিবর্তন থাকে।
জিন আর জীবনযাত্রার প্রভাব আলাদা করা কঠিন। তবে ধারণা করা হয়, দীর্ঘায়ু ২০-৪০% জিনের উপর নির্ভর করে।
কিন্তু শুধু ভালো জিন থাকলেই হবে না। ইথেল ক্যাটারহ্যাম ১১৫ বছরে পৌঁছেছেন, তাঁর এক বোন ১০৪ বছর বেঁচেছিলেন। কিন্তু তাঁর দুই মেয়ে ৭১ আর ৮৩ বছর বয়সে মারা গেছেন।
তাই ভালো জিন পেলেও ১১৫ বছর বাঁচা খুব ভাগ্যের ব্যাপার। শরীরের কোষে পরিবর্তন হয়, রক্ত জমাট বাঁধে, জৈব ভাগ্য শেষ হয়ে যায়। তবু, বেশি দিন সুস্থ থাকতে চাইলে প্রতিদিন একটু শরীরচর্চা করুন, ভালো খাবার খান, ভালো ঘুমান, আর মানসিক চাপ কমান।
লেখাটি ভালো লেগে থাকলে আমাকে ফেসবুকে অনুসরণ করতে পারেন। এছাড়াও আমি টুইটারে এবং ইন্সটাগ্রামে সক্রিয় আছি।
মন্তব্য করুন