রেজিষ্ট্রেশন করুন

লগইন করুন

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

লগইন করুন

রেজিষ্ট্রেশন করুন

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit.Morbi adipiscing gravdio, sit amet suscipit risus ultrices eu.Fusce viverra neque at purus laoreet consequa.Vivamus vulputate posuere nisl quis consequat.

মহাবিশ্বের সময় ফুরিয়ে আসছে: এক অভাবনীয় বৈজ্ঞানিক পূর্বাভাস

মহাবিশ্বের সময় ফুরিয়ে আসছে: এক অভাবনীয় বৈজ্ঞানিক পূর্বাভাস

গভীর রাত। শহরের কোলাহল থেমে গেছে। মুনতাসির তার বাড়ির ছাদে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তারার ঝিকিমিকি, দূরের নীলাভ আলো আর শূন্যতার নিঃস্তব্ধতা তাকে যেন অন্য জগতে নিয়ে যায়। হঠাৎ তার মনে একটি প্রশ্ন জাগে—এই বিশাল মহাবিশ্ব, এই অসীমতা, এর শেষ কোথায়? সত্যিই কি একদিন সবকিছু শেষ হয়ে যাবে? তারার আলো, গ্রহের ঘূর্ণন, এমনকি আমাদের এই পৃথিবীও কি একদিন শুধুই একটি স্মৃতি হয়ে থাকবে?

মহাবিশ্বের সময় ফুরিয়ে আসছে: এক অভাবনীয় বৈজ্ঞানিক পূর্বাভাস

 

মুনতাসিরের মতো আমরা অনেকেই এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি। বিজ্ঞানীরা বলেন, মহাবিশ্বের শেষ একদিন হবেই, তবে সেটি ঘটবে অগণিত বছর পর।

কিন্তু সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণা এই ধারণাকে একেবারে পালটে দিয়েছে। গবেষকরা বলছেন, মহাবিশ্বের অবসান আগের হিসেবের তুলনায় অনেক কাছাকাছি হতে পারে।

কীভাবে? চলুন, এই রহস্যের গভীরে ডুব দিই।

হকিং বিকিরণ: একটি বিজ্ঞানের গল্প

হকিং বিকিরণ: একটি বিজ্ঞানের গল্প

এই গল্পের কেন্দ্রে রয়েছে হকিং বিকিরণ—একটি রহস্যময় শক্তি, যা প্রথম ধারণা দিয়েছিলেন বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। ১৯৭৪ সালে তিনি বলেছিলেন, ব্ল্যাক হোল, যাকে আমরা মহাবিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় বস্তু মনে করি, সেটি পুরোপুরি “কালো” নয়। এটি এক ধরনের বিকিরণ নির্গত করে, যা এখন তার নামে পরিচিত।

কিন্তু এই বিকিরণ কী? সহজভাবে বলতে গেলে, ব্ল্যাক হোলের ঘটনাপ্রান্তে (ইভেন্ট হরাইজন) কোয়ান্টাম কণার জন্ম হয়। এই কণাগুলোর কিছু অংশ ব্ল্যাক হোলের ভেতরে পড়ে যায়, আর কিছু অংশ বাইরে বেরিয়ে আসে। এই বেরিয়ে আসা কণাগুলোই হকিং বিকিরণ। এই প্রক্রিয়ার ফলে ব্ল্যাক হোল ধীরে ধীরে তার ভর হারায় এবং একসময় পুরোপুরি বাষ্পীভূত হয়ে যায়।

কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে, এই বিকিরণ শুধু ব্ল্যাক হোলেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তু, যেমন নিউট্রন স্টার, হোয়াইট ডওয়ার্ফ, এমনকি গ্যালাক্সির বিশাল অন্ধকার পদার্থের হ্যালো থেকেও নির্গত হতে পারে। এই আবিষ্কার মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের ধারণাকে বদলে দিচ্ছে।

নতুন গবেষণা: মহাবিশ্বের অবসানের নতুন হিসেব

নতুন গবেষণা: মহাবিশ্বের অবসানের নতুন হিসেব

নেদারল্যান্ডসের র‍্যাডবাউড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিদ হেইনো ফালকে এবং তার সহকর্মীরা একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন, যা মহাবিশ্বের শেষের সময়সীমা নিয়ে নতুন আলোকপাত করেছে। তাদের গণনা অনুযায়ী, হকিং বিকিরণের কারণে মহাবিশ্বের বিভিন্ন বস্তু অনেক দ্রুত বাষ্পীভূত হবে, যা মহাবিশ্বের “কার্যকরী” শেষকে আরও কাছে নিয়ে আসছে।

আগে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, মহাবিশ্বের আয়ু হতে পারে ১০^১১০ বছর, যা একটি অকল্পনীয় দীর্ঘ সময়। কিন্তু নতুন হিসেবে দেখা গেছে, এই সময়সীমা আসলে ১০^৭৮ বছর। এটি এখনও বিশাল একটি সংখ্যা, কিন্তু আগের ধারণার তুলনায় অনেক কম। এই হিসেব আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে—মহাবিশ্বের শেষ কি আমরা যতটা ভাবি, ততটা দূরে নয়?

নিউট্রন স্টার, হোয়াইট ডওয়ার্ফ ও মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ

নিউট্রন স্টার, হোয়াইট ডওয়ার্ফ ও মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ

একটি তারার জীবন শেষ হলে তা বিভিন্ন রূপ নেয়। বড় তারাগুলো বিস্ফোরিত হয়ে ব্ল্যাক হোল বা নিউট্রন স্টারে পরিণত হয়। ছোট তারাগুলো, যেমন আমাদের সূর্য, হোয়াইট ডওয়ার্ফে রূপান্তরিত হয়। এই হোয়াইট ডওয়ার্ফগুলো মহাবিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী বস্তু। এগুলো কয়েক বিলিয়ন বছর ধরে ঠান্ডা হয় এবং ধীরে ধীরে তাদের আলো হারায়।

কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে, এই হোয়াইট ডওয়ার্ফগুলোও হকিং বিকিরণের কারণে একসময় বাষ্পীভূত হয়ে যাবে। গণনা অনুযায়ী, একটি গড়পড়তা হোয়াইট ডওয়ার্ফের বাষ্পীভবনের সময় হবে ১০^৭৮ বছর। এই সময়কেই গবেষকরা মহাবিশ্বের “কার্যকরী শেষ” হিসেবে বিবেচনা করছেন।

অন্যদিকে, ব্ল্যাক হোলগুলো এর চেয়ে অনেক আগেই, অর্থাৎ ১০^৬৮ বছরে বাষ্পীভূত হবে। নিউট্রন স্টারের ক্ষেত্রেও সময়কাল প্রায় একই। এমনকি গ্যালাক্সির বিশাল অন্ধকার পদার্থের হ্যালোও হকিং বিকিরণের কারণে ১০^১৩৫ বছরে বিলীন হয়ে যাবে। এই সংখ্যাগুলো শুনতে অনেক বড় মনে হলেও, এগুলো আগের হিসেবের তুলনায় অনেক কম।

হকিং বিকিরণের নতুন দিগন্ত

হকিং বিকিরণের নতুন দিগন্ত

এই গবেষণার সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো, হকিং বিকিরণের নতুন ব্যাখ্যা। আগে আমরা মনে করতাম, এই বিকিরণ শুধু ব্ল্যাক হোলের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু গবেষকরা দেখেছেন, যে কোনো বস্তু, যার চারপাশে পর্যাপ্ত শক্তি ও কোয়ান্টাম প্রভাব রয়েছে, তা থেকে এই বিকিরণ নির্গত হতে পারে। এর মানে হলো, মহাবিশ্বের প্রায় সব কিছুই—তারা, গ্রহ, গ্যালাক্সি—একসময় এই বিকিরণের কারণে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যাবে।

গবেষক ওয়ান্ড্রাক বলেন, “ব্ল্যাক হোলের কোনো কঠিন পৃষ্ঠ নেই। তাই কিছু বিকিরণ ফিরে এসে ব্ল্যাক হোলের ভর বাড়ায়, যা বাষ্পীভবন প্রক্রিয়াকে ধীর করে। কিন্তু নিউট্রন স্টার বা হোয়াইট ডওয়ার্ফের ক্ষেত্রে এমন কোনো বাধা নেই।” এই কারণে এই বস্তুগুলো তুলনামূলকভাবে দ্রুত বাষ্পীভূত হবে।

মহাবিশ্বের শেষ মানে কী?

মহাবিশ্বের শেষ মানে কী?

এই নতুন গবেষণা আমাদের অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মহাবিশ্বের শেষ হলে কী হবে? সবকিছু কি শুধু অন্ধকারে ডুবে যাবে? নাকি নতুন কিছুর জন্ম হবে? বিজ্ঞানীরা এখনও এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তবে তারা বলছেন, এই গবেষণার উদ্দেশ্য ভয় দেখানো নয়, বরং মহাবিশ্বের প্রকৃতি নিয়ে আমাদের কৌতূহল জাগানো।

মানব সভ্যতার জন্য এই সময়সীমা প্রায় অর্থহীন। আমাদের সূর্য নিজেই প্রায় ৫ বিলিয়ন বছরের মধ্যে মারা যাবে। তখন পৃথিবীও হয়তো বাসযোগ্য থাকবে না। তাই ১০^৭৮ বছর পরের কথা ভাবা আমাদের জন্য কল্পনার একটি খেলা। কিন্তু এই কল্পনাই বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

আমাদের জন্য এর অর্থ কী?

আমাদের জন্য এর অর্থ কী?

মুনতাসিরের মতো আমরা সবাই হয়তো রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবি—আমরা কোথা থেকে এসেছি? আমাদের গন্তব্য কোথায়? এই গবেষণা আমাদের সেই প্রশ্নগুলোর একটি নতুন মাত্রা দেয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মহাবিশ্ব চিরস্থায়ী নয়। এটিরও একটি শুরু আছে, একটি শেষ আছে।

কিন্তু এই জ্ঞান কি আমাদের ভয় পাওয়ার জন্য? না। এটি আমাদের উৎসাহিত করে মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচন করতে। প্রতিটি নতুন আবিষ্কার আমাদের নিজেদের সম্পর্কে, আমাদের পরিবেশ সম্পর্কে আরও জানতে সাহায্য করে।

মহাবিশ্বের শেষ অধ্যায়

মহাবিশ্বের শেষ অধ্যায়

এই গবেষণা আমাদের একটি গল্প শোনায়। এটি একটি তারার জন্মের গল্প, তার মৃত্যুর গল্প, আর মহাবিশ্বের ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার গল্প। এই গল্পে আছে অন্ধকার, আছে আলো, আর আছে কিছু কণার নীরব নৃত্য।

আমরা হয়তো কখনো এই গল্পের শেষ দেখতে পাব না। কিন্তু আমাদের কল্পনা আর বিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা এর ছায়া দেখতে পারি। মহাবিশ্বের শেষ যত দূরেই হোক, এই গল্প আমাদের মনে থাকবে—একটি অনন্ত রহস্যের গল্প।

লেখাটি ভালো লেগে থাকলে আমাকে ফেসবুকে অনুসরণ করতে পারেন। এছাড়াও আমি টুইটারে এবং ইন্সটাগ্রামে সক্রিয় আছি।

নাম: Administrator

আমার নাম মেহেদী হাসান। আমি একজন শিক্ষার্থী। নিজে শিখতে এবং অপরকে শেখাতে ভালোবাসি।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করার মাধ্যমে, আপনি আমার পরিষেবার শর্তাবলী এবং গোপনীয়তার নীতি মেনে চলবেন।

MehediBOT Icon
কণ্ঠস্বর