
পৃথিবীর অভ্যন্তরের গঠন ও এর সাথে আমাদের জীবনের সংযোগ
বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের বিস্তৃত দিগন্তে আমাদের পৃথিবী একটি ছোট্ট গ্রহ হলেও, এখানে প্রাণের স্পন্দন ও জীবনের রং-রূপ অসাধারণ। পৃথিবীর অভ্যন্তরে কী আছে তা জানার চেষ্টা আমাদের জিজ্ঞাসু মনকে উদ্দীপিত করে।
চলুন, পৃথিবীর অভ্যন্তরের রহস্যময় গঠন ও এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
পৃথিবীর গঠন ও এর তাপমাত্রা
পৃথিবীর অভ্যন্তরকে বিজ্ঞানীরা প্রধানত তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছেন: ভূত্বক, ম্যান্টল এবং কোর। প্রতিটি স্তরেই রয়েছে বিভিন্ন উপাদান এবং বিভিন্ন তাপমাত্রা, যা পৃথিবীর স্থিতিশীলতা এবং জীবনের ধারাকে প্রভাবিত করে।
ভূত্বক: প্রাণের আশ্রয়স্থল
ভূত্বক, যা সমুদ্র পৃষ্ট থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত, আমাদের জীবনযাত্রার মূল ভিত্তি। মাটি, পানি, পাথর, সাগর, মহাদেশ এবং পাহাড়-পর্বত সবই এই ভূত্বকের অংশ। ভূত্বকের কারণে পৃথিবীতে সবুজ বৈচিত্র্য এবং প্রানের স্পন্দন রয়েছে। আমরা এখানে গাছপালা, প্রাণী এবং অন্যান্য জীবের অস্তিত্ব খুঁজে পাই। এই স্তরটিই আমাদের খাবার এবং পানির প্রধান উত্স সরবরাহ করে।
ম্যান্টল: অগ্নি সমুদ্র
ভূত্বকের নিচে ম্যান্টল নামে একটি বিশাল অঞ্চল রয়েছে, যা প্রায় ২৯০০ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত। ম্যান্টলের তাপমাত্রা ২০০° থেকে ৪০০০° সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত হতে পারে। এই অঞ্চলটি একটি অগ্নি সমুদ্রের মত, যেখানে অগ্নিস্রোত প্রবাহিত হয়। ম্যান্টলের উপরের অংশ অপেক্ষা নিচের অংশটি আঠাল, তবে তাপমাত্রা এবং চাপ অত্যন্ত বেশি।
কোর: পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল
ম্যান্টলের নিচে কোর, যা দুই ভাগে বিভক্ত: বহিঃস্থ এবং অন্তঃস্থ মজ্জা। বহিঃস্থ মজ্জা প্রায় ২৩০০ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত, যার তাপমাত্রা প্রায় ৫০০০° সেন্টিগ্রেড। অন্তঃস্থ মজ্জা আরও গভীরে, প্রায় ১২২০ কিলোমিটার বিস্তৃত এবং এর তাপমাত্রা প্রায় ৬০০০° সেন্টিগ্রেড। এই তাপমাত্রা সূর্যের বহিঃস্থ তাপমাত্রার সমান।
অগ্নিস্রোতের সাথে আমাদের জীবন
পৃথিবীর অভ্যন্তরের এত তাপ ও অগ্নিস্রোত থাকা সত্ত্বেও আমরা পৃষ্ঠে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছি। ভূত্বকের শক্ত মাটি আমাদের জন্য একপ্রকার সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে। আগ্নেয়গিরি, ভূমিকম্প এবং অন্যান্য ভূগর্ভস্থ ঘটনার মধ্য দিয়ে আমরা অভ্যন্তরের অগ্নিস্রোতের শক্তি উপলব্ধি করতে পারি।
জীবনের বিবর্তন ও সুরক্ষা
পৃথিবী বহু দুর্যোগ ও প্রাকৃতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে। ডায়নোসরের বিলুপ্তি থেকে শুরু করে বরফ যুগ, সবকিছুই প্রাকৃতিক শক্তির অংশ। এসব পরিবর্তনের মধ্যে পৃথিবীর পৃষ্ঠে জীবন ধারাবাহিকভাবে টিকে রয়েছে।
পৃথিবীর ভবিষ্যৎ
আমাদের সুন্দর সবুজ পৃথিবী ক্রমাগত পরিবর্তনশীল। পৃথিবীর অভ্যন্তরের এই অগ্নি গোলকের উপস্থিতি আমাদেরকে শুধু আতঙ্কিতই করে না, বরং এটি আমাদের জীবনের বৈচিত্র্য এবং পরিবর্তনের মুল প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। পৃথিবীর অন্তিমকাল পর্যন্ত এই বিবর্তন চলতে থাকবে।
আমাদের উচিত পৃথিবীর এই বৈচিত্র্যময়তা এবং প্রাকৃতিক শক্তিকে সম্মান ও সুরক্ষিত রাখা, যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মও এই সুন্দর পৃথিবীতে জীবনের স্পন্দন অনুভব করতে পারে।
লেখাটি ভালো লেগে থাকলে আমাকে ফেসবুকে অনুসরণ করতে পারেন। এছাড়াও আমি টুইটারে এবং ইন্সটাগ্রামে সক্রিয় আছি।
মন্তব্য করুন