
নিয়মিত পায়খানার সময়সূচি ও সামগ্রিক স্বাস্থ্য সম্পর্কের বিজ্ঞান
সম্প্রতি Cell Reports Medicine জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, দৈনিক পায়খানার সময়সূচি শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
গবেষণাটি বলছে, প্রতিদিন এক থেকে দুইবার পায়খানা করা স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপকারী।
আগের গবেষণাগুলো দেখিয়েছে যে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়ার সাথে সংক্রমণ এবং স্নায়ুক্ষয়জনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ার সম্পর্ক রয়েছে।
তবে এই গবেষণাগুলোর তথ্য মূলত অসুস্থ রোগীদের থেকে নেওয়া হয়েছিল, তাই অসুস্থতার কারণ নাকি ফলাফল—এটা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
গবেষণার প্রধান লেখক শন গিবন্স, যিনি ইনস্টিটিউট ফর সিস্টেমস বায়োলজিতে কাজ করেন, এএফপিকে জানান, “আমি আশা করি এই গবেষণা ডাক্তারদের আরও সচেতন করবে যে পায়খানার সময়সূচি ঠিক না থাকা কেবল সামান্য ঝামেলা নয়, এর সুদূরপ্রসারী স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।”
গবেষণার ফলাফল
গিবন্স এবং তার দল ১,৪০০ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের উপর গবেষণা চালান। এতে তাদের শারীরিক, জীববৈজ্ঞানিক এবং জীবনযাত্রার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে অন্তর্ভুক্ত ছিল রক্তের রাসায়নিক গঠন, অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম, জেনেটিক তথ্য এবং আরও অনেক কিছু।
অংশগ্রহণকারীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়:
- কোষ্ঠকাঠিন্য: সপ্তাহে এক থেকে দুইবার।
- লো-নরমাল: সপ্তাহে তিন থেকে ছয়বার।
- হাই-নরমাল: দিনে এক থেকে তিনবার।
- ডায়রিয়া: দিনে তিনবারের বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, তাদের অন্ত্রে পায়খানা দীর্ঘ সময় ধরে থাকলে মাইক্রোবগুলো আঁশ থেকে শরীরের জন্য উপকারী শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করতে পারে না। বরং তারা প্রোটিন ফারমেন্ট করে, যা থেকে p-cresol sulfate এবং indoxyl sulfate এর মতো ক্ষতিকারক টক্সিন তৈরি হয়।
গিবন্স বলেন, “কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা সুস্থ ব্যক্তিদের রক্তে আমরা এসব টক্সিনের মাত্রা বেশি দেখেছি, যা কিডনির উপর বিশেষ চাপ সৃষ্টি করে।”
ফল ও সবজির ভূমিকা
অন্যদিকে, ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে দেহ অতিরিক্ত পরিমাণে পিত্ত অ্যাসিড ত্যাগ করে, যা সাধারণত যকৃত শোষণ করে খাদ্যের ফ্যাট ভাঙার কাজে ব্যবহার করে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ডায়রিয়া যকৃত এবং প্রদাহজনিত সমস্যার সূচক তৈরি করতে পারে।
পায়খানার সময়সূচি এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য নিয়ে পাওয়া “গোল্ডিলকস জোন” হলো দিনে এক থেকে দুইবার পায়খানা। এই সময়সূচি “স্ট্রিক্ট অ্যানেরোবস” নামে পরিচিত ভালো ব্যাকটেরিয়ার জন্য সহায়ক। তবে এই বিষয়টি আরও ভালোভাবে নির্ধারণে বেশি গবেষণা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন গিবন্স।
জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস
গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণরা, নারীরা এবং যাদের ওজন কম তারা তুলনামূলকভাবে কমবার পায়খানা করেন। পুরুষদের বেশি খাদ্যগ্রহণ এবং নারীদের হরমোনগত ও স্নায়বিক পার্থক্য এর কারণ হতে পারে।
সুস্থ সময়সূচি বজায় রাখতে যেসব অভ্যাস সবচেয়ে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে তা হলো:
- বেশি পরিমাণে ফল ও সবজি খাওয়া।
- প্রচুর পানি পান।
- নিয়মিত শরীরচর্চা।
- উদ্ভিদকেন্দ্রিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ।
গিবন্স বলেন, “ফল ও সবজির ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হলো সবচেয়ে বড় সংকেত, যা আমরা লক্ষ্য করেছি।”
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
গবেষণার পরবর্তী ধাপে বৃহৎ পরিসরে একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যেখানে দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের পায়খানার সময়সূচি নিয়ন্ত্রণ করে রোগ প্রতিরোধে এর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা হবে।
লেখাটি ভালো লেগে থাকলে আমাকে ফেসবুকে অনুসরণ করতে পারেন। এছাড়াও আমি টুইটারে এবং ইন্সটাগ্রামে সক্রিয় আছি।
মন্তব্য করুন