
মন ভালো করার জাপানি পদ্ধতি (১০০% কার্যকরী)
আপনার কোনো বন্ধুর কী ‘ভাল্লাগে না’ রোগ আছে? তার কী পড়াশোনায় মন বসে না? খেলাধুলা বা নিজের শখের কোনো কাজ করতেও কী তার ভালো লাগে না? পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধব সবার কথা শুনতে তার বিরক্তিকর লাগে? যেন তারা কথা বলছেই তাকে বিরক্ত করার জন্য।
কোনোভাবেই তার মনে শান্তি লাগে না। সব সময় কেমন জানি অস্থির লাগে। নিজের অজান্তে আপনার বন্ধু মাঝেমধ্যে বলে ফেলে–‘ভাল্লাগে না’। বর্তমানে ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়। আসল প্রশ্ন হলো, ‘ভাল্লাগে না’ রোগের কী আদৌও কোনো ওষুধ আছে?
এর উত্তর খুঁজতে আমাদেরকে যেতে হবে জাপানে। না, না, সত্যি সত্যি যেতে হবে না, মূলত জাপানের সংস্কৃতি থেকে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।
সুন্দর মনোরম প্রকৃতি, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আর নতুন প্রযুক্তি আবিস্কারের জন্য জাপান পরিচিত। জাপানের মানুষজন খুব নিয়ম মেনে চলে। এইজন্য তারা বাঁচেও অন্যদের তুলনায় বেশি।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় জাপানিদের জীবনদর্শন একটু আলাদা। কঠোর পরিশ্রম করেও পরিপূর্ণ সুখী জীবন কাটাতে জাপানিদের জুড়ি নেই।
‘ভাল্লাগে না’ রোগের সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ হলো জাপানিদের এই ভিন্ন রকম জীবনদর্শন। চলুন দেখি তাহলে, এই ভালো না লাগার বিপরীতে জাপানিরা কী করে। এই পদ্ধতিগুলো হয়তো আপনার বন্ধুর ‘ভাল্লাগে না’ রোগ কাটিয়ে উঠতে অনেকাংশে সাহায্য করবে।
ইকিগাই
বইপড়ুয়াদের কাছে ‘ইকিগাই’ শব্দটি মোটামুটি পরিচিত। কিন্তু ইকিগাই মানে কী?
ইকিগাই হলো জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করা।
প্রত্যেকটি মানুষের জীবনের একটি উদ্দেশ্য আছে। এই উদ্দেশ্য তৈরি হয় মানুষটি কী পছন্দ করে, কোনটি অপছন্দ করে, কোন বিষয়টি ভালো পারে। এছাড়া চারপাশের পরিবেশের ওপর ভিত্তি করেও উদ্দেশ্য তৈরি হয়।
একজন মানুষের মনের ভেতরে একটু একটু করে এভাবে জীবনের উদ্দেশ্য তৈরি হয়। এই উদ্দেশ্য খুঁজে বের করে তা সর্বদা মনে রাখা-ই হলে ইকিগাই।
এ বিষয়ে আরও জানতে হেক্টর গার্সিয়া ও ফ্রান্সেস্ক মিরালসের লেখা ‘ইকিগাই’ বইটি পড়ে ফেলতে পারেন।
জাপানি এই দর্শন আপনার বন্ধুর জীবনকে গুছিয়ে নিতে অনেকাংশে সাহায্য করবে বলে আমি মনে করি। কেননা জাপানিদের ধারণামতে, ইকিগাই খুঁজে পেলে মানুষের সুখী এবং সন্তুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়।
শিনরিন-ইয়োকু
শিনরিন-ইয়োকু হলো মানসিক চাপ কমানোর জন্য বনের স্পর্শ নেওয়া।
শিনরিন-ইয়োকুর মূল দর্শন হলো, প্রকৃতি মানুষের খুব কাছের বন্ধু। ‘শিনরিন-ইয়োকু’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ বন দিয়ে গোসল করা। কিন্তু বন দিয়ে গোসল কীভাবে করা সম্ভব?
এর জন্য বনে যাওয়া জরুরি নয়। যেখানে বাগান বা উদ্যান আছে, যেখানে গাছ আছে, সেখানেই আপনি বনের স্পর্শ অনুভব করতে পারেন। প্রকৃতির রূপ, শব্দ ও গন্ধ মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করতে হবে।
আপনার বা আপনার বন্ধুর বাসার পাশে হয়তো কোনো খোলামেলা জায়গা নেই, কিন্তু কিছু ছোট মানিপ্ল্যান্ট বা সবুজ ইনডোর গাছ দিয়ে সহজেই ঘরের ভেতরে বনের স্পর্শ আনা সম্ভব। এভাবেও প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।
গবেষণা বলছে, শিনরিন-ইয়োকু চর্চা করলে মানুষের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং মানসিক চাপও কমে।
সোকুনিন
নিজের কাজে সেরা হওয়াকে বলে সোকুনিন।
যুদ্ধে যাওয়ার সময় মানুষ নিজের সেরা অস্ত্র সঙ্গে নিয়ে যায় এবং নিয়মিত সেই অস্ত্রের যত্ন নেয়।
জীবনে সুখী থাকার জন্য একইভাবে একটি শক্তিশালী অস্ত্র প্রয়োজন। তবে এই অস্ত্র দিয়ে কোনো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হবে না।
জাপানিজ শব্দ ‘সোকুনিন’ মানে শিল্পী, কিন্তু জীবনদর্শন হিসেবে সোকুনিন শব্দটি আরও গভীর কিছু বোঝায়। পছন্দের কোনো একটি কাজে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উজাড় করে দেওয়া হলো সোকুনিন।
নিজের পছন্দের কাজে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারলে যে কেউ সেই কাজে সেরা হয়ে উঠতে পারে। এভাবেই জীবনে আত্মতৃপ্তি এবং সুখ আসে।
তাই আমাদের মাথা খাটিয়ে বের করতে হবে, কোন কাজ আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে এবং সেই কাজেই মনোযোগ দিতে হবে।
ওমিয়াজ
উপহার দিয়ে মন জয় করাকে বলে ওমিয়াজ।
মানুষ স্বভাবতই উপহার পেতে ভালোবাসে। ‘ওমিয়াজ’ মানে কাউকে তার পছন্দ-অপছন্দ মাথায় রেখে উপহার দেওয়া।
জাপানিদের মধ্যে এমন উপহার দেওয়ার প্রচলন আছে। জাপানি কেউ কোথাও ঘুরতে গেলে ফেরার সময় সবার জন্য পছন্দসই উপহার নিয়ে আসে।
ওমিয়াজ মানে জাঁকজমকপূর্ণ উপহার দেওয়া নয়, বরং সাধারণ কোনো উপহার দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এই উপহারের পেছনে একটি অর্থ থাকে। উপহারটি স্থানীয় কোনো খাবার বা হাতে তৈরি কিছু হতে পারে।
আপনি চাইলে ওমিয়াজ চর্চা করতে পারেন। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কাছের মানুষদের উপহার দিলে ভালো লাগবে এবং এতে চারপাশের মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় থাকবে।
কিন্টসুগি
ভাঙা জিনিস জোড়া লাগাতে মূল্যবান ধাতুর ব্যবহারকে বলে কিন্টসুগি।
আমরা প্রায় সবাই জীবনে একবার হলেও মায়ের প্রিয় কাচের কাপ-প্লেট ভেঙে বকা খেয়েছি। তখন মনে হয়, ইশ! যদি ভাঙা জিনিস নিজেই ঠিক হয়ে যেত!
ভাঙা কাচ বা মাটির জিনিস মেরামতের একটি জনপ্রিয় জাপানি কৌশল হলো কিন্টসুগি। এই কৌশলে সোনা, রুপা এবং প্লাটিনামের মতো মূল্যবান ধাতু ব্যবহার করে ভাঙা জিনিসগুলো মেরামত করা হয়।
কিন্টসুগি কেবল একটি শিল্প নয়, এটি একটি দার্শনিক ধারণা যা বলে, খুঁত থাকা সত্ত্বেও একটি বস্তু মূল্যবান, সুন্দর এবং আকর্ষণীয় হতে পারে। খুঁত মানেই বাতিল হয়ে যাওয়া নয়।
কিন্টসুগির মূল ধারণা হলো, প্রতিটি খুঁতের মধ্যেই সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করলে জীবনের কঠিন সময়েও ভালো কিছু খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
জীবনে খুশি থাকতে জাপানি জীবনদর্শন অনুসরণ করতেই হবে এমন নয়। তবে জাপানিদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আপনার বন্ধুর ‘ভাল্লাগে না’ ভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারেন।
লেখাটি ভালো লেগে থাকলে আমাকে ফেসবুকে অনুসরণ করতে পারেন। এছাড়াও আমি টুইটারে এবং ইন্সটাগ্রামে সক্রিয় আছি।
মন্তব্য ( 2 )
আমার কোনো বন্ধুর আছে কিনা জানি না, তবে আমার নিজেরই ‘ভাল্লাগে না’ রোগ আছে।
উল্লিখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে দেখতে পারেন। আশা করি ফলপ্রসূ হবে।