রেজিষ্ট্রেশন করুন

লগইন করুন

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

লগইন করুন

রেজিষ্ট্রেশন করুন

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit.Morbi adipiscing gravdio, sit amet suscipit risus ultrices eu.Fusce viverra neque at purus laoreet consequa.Vivamus vulputate posuere nisl quis consequat.

বাসায় বসে কাজ: মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?

বাসায় বসে কাজ: মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?

বর্তমান সময়ে কাজের ধরনে এক বিশাল পরিবর্তন এসেছে। ‘বাসায় বসে কাজ’ বা ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ (Work from home) এখন আর কোনো বিলাসিতা নয়, বরং আধুনিক কর্মজীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশগুলোতে এটি এখন কর্মসংস্কৃতির স্থায়ী অনুষঙ্গ।

কিন্তু এই পরিবর্তনের আড়ালে একটি বড় প্রশ্ন বারবার উঁকি দিচ্ছে: বাসায় বসে কাজ করা কি আসলেই আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?

বাসায় বসে কাজ: মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?

এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। অনেকেই ভাবেন, বাসায় কাজ করলে মানসিক প্রশান্তি বাড়ে। কিন্তু আসলেই কি তাই? যদি তাই হয়, তবে সপ্তাহে ঠিক কতদিন বাসায় কাজ করা উচিত? কাদের জন্য এই ব্যবস্থাটি সবচেয়ে বেশি ফলপ্রসূ? আর এই ভালো লাগার কারণ কি শুধুই প্রতিদিনের জ্যাম আর যাতায়াতের ভোগান্তি থেকে মুক্তি, নাকি অন্য কিছু?

সম্প্রতি ১৬ হাজারেরও বেশি অস্ট্রেলীয় কর্মীর ওপর চালানো একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং বিস্তারিত গবেষণায় এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা হয়েছে। চলুন, সেই গবেষণার চমকপ্রদ তথ্যগুলো বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

গবেষণার প্রেক্ষাপট: তথ্যের গভীরতা

গবেষণার প্রেক্ষাপট: তথ্যের গভীরতা

এই গবেষণার ভিত্তি ছিল অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ‘হাউসদোল্ড, ইনকাম অ্যান্ড লেবার ডাইনামিক্স’ (HILDA) জরিপ। গবেষকরা দীর্ঘ ২০ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন। এর মাধ্যমে ১৬ হাজারেরও বেশি কর্মীর পেশাগত জীবন এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদী গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে।

গবেষণার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এতে কোভিড মহামারীর সময়কাল (২০২০ এবং ২০২১ সাল) অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এর পেছনে একটি যৌক্তিক কারণও রয়েছে। মহামারী চলাকালীন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ঘরবন্দী থাকা, ভাইরাসের আতঙ্ক এবং অনিশ্চয়তার কারণে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। সেই সময়ের মানসিক অবস্থার সাথে স্বাভাবিক সময়ের ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর তুলনা করলে সঠিক চিত্রটি পাওয়া যেত না। তাই গবেষকরা সেই বিশেষ সময়টুকু বাদ দিয়ে স্বাভাবিক সময়ের তথ্যের ওপর নির্ভর করেছেন।

এই বিশাল ডাটাসেট বা তথ্যভাণ্ডার বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে, সময়ের সাথে সাথে মানুষের যাতায়াতের অভ্যাস এবং কাজের ধরন পরিবর্তনের ফলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে কী প্রভাব পড়ছে। পরিসংখ্যানগত মডেলগুলো এমন নিখুঁতভাবে সাজানো হয়েছিল, যাতে জীবনের বড় কোনো ঘটনা (যেমন – নতুন চাকরি পাওয়া, বিয়ে বা সন্তানের জন্ম) ফলাফলকে প্রভাবিত করতে না পারে।

মূলত দুটি প্রধান বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে মানসিক স্বাস্থ্যের পরিবর্তন মাপা হয়েছে:

  1. প্রতিদিন অফিসে যাতায়াতের সময় (Commuting time)।
  2. বাসায় বসে কাজ করার প্রবণতা (Working from home)।

এই গবেষণার সবচেয়ে অভিনব দিকটি হলো, এখানে ভালো মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী এবং তুলনামূলক দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারীদের আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।

যাতায়াতের ধকল: নারী ও পুরুষের ওপর ভিন্ন প্রভাব

যাতায়াতের ধকল: নারী ও পুরুষের ওপর ভিন্ন প্রভাব

গবেষণায় দেখা গেছে, অফিসে যাতায়াতের বিষয়টি নারী ও পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্যে একদম ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে।

নারীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অফিসে যাতায়াতের সময়ের দৈর্ঘ্য তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে না। অর্থাৎ, জ্যাম বা রাস্তার সময়টুকু তাদের মানসিক অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন ঘটায় না।

কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে চিত্রটি ভিন্ন। বিশেষ করে যেসব পুরুষ আগে থেকেই মানসিকভাবে কিছুটা চাপে আছেন বা যাদের মানসিক স্বাস্থ্য নড়বড়ে, দীর্ঘ সময় যাতায়াত তাদের জন্য বেশ ক্ষতিকর।

তবে এই ক্ষতির পরিমাণ খুব বিশাল কিছু নয়, কিন্তু তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতোও নয়। উদাহরণস্বরূপ, মাঝারি মানের মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী একজন পুরুষের যাতায়াতের সময় যদি এক পথে আধা ঘণ্টা বেড়ে যায়, তবে তার মানসিক স্বাস্থ্যে যেটুকু অবনতি ঘটে, তা পরিবারের মোট আয় ২% কমে যাওয়ার কষ্টের সমতুল্য। অর্থাৎ, রাস্তার ধকল তাদের মনে আর্থিক ক্ষতির মতোই এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

নারীদের জন্য সেরা সমাধান: ‘হাইব্রিড’ মডেল

নারীদের জন্য সেরা সমাধান: ‘হাইব্রিড’ মডেল

নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বা বাসায় বসে কাজ করার বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তবে এখানে একটি শর্ত আছে। এটি সব ধরনের ব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা তখনই মানসিকভাবে সবচেয়ে বেশি ভালো থাকেন যখন তারা ‘হাইব্রিড’ মডেলে কাজ করেন। অর্থাৎ, সপ্তাহের বেশিরভাগ সময় তারা বাসায় কাজ করবেন, কিন্তু সপ্তাহে অন্তত এক বা দুই দিন অফিসে যাবেন।

যেই নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য কিছুটা দুর্বল বা যারা বিষণ্নতায় ভোগেন, তাদের ক্ষেত্রে পুরোপুরি অফিসে গিয়ে কাজ করার চেয়ে এই হাইব্রিড ব্যবস্থা অনেক বেশি কার্যকর। এই ব্যবস্থার ফলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যে উন্নতি হয়, তা পারিবারিক আয় ১৫% বৃদ্ধি পাওয়ার সমান আনন্দের বা স্বস্তির বিষয়। এটি সত্যিই একটি বড় প্রভাব।

এই ফলাফলটি পূর্ববর্তী অনেক গবেষণার ফলের সাথে মিলে যায়, যেখানে দাবি করা হয়েছিল যে হাইব্রিড কাজের ব্যবস্থা কর্মীদের কাজের সন্তুষ্টি এবং উৎপাদনশীলতা, উভয়ই বৃদ্ধি করে।

এখন প্রশ্ন হলো, নারীরা কেন এতে বেশি উপকৃত হন? এর কারণ কি শুধুই যাতায়াতের সময় বাঁচানো?

গবেষণা বলছে, না। যেহেতু এই গবেষণায় যাতায়াতের বিষয়টি আলাদাভাবে হিসাব করা হয়েছে, তাই বোঝা যায় যে বাসায় কাজের অন্যান্য সুবিধাও এখানে বড় ভূমিকা রাখে। যেমন – কাজের চাপ কম অনুভব করা, অফিসের পলিটিক্স থেকে দূরে থাকা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কাজ ও সংসারের মধ্যে একটি সুন্দর ভারসাম্য (Work-life balance) বজায় রাখতে পারা।

তবে যারা মাঝে মাঝে বা অনিয়মিতভাবে বাসায় কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যে তেমন কোনো স্পষ্ট প্রভাব দেখা যায়নি। আবার যারা পুরোপুরি বা ‘ফুল-টাইম’ বাসায় কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রেও ফলাফল খুব একটা নিশ্চিত নয়, কারণ গবেষণার তথ্যে এমন নারীর সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল।

পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, পুরুষদের ক্ষেত্রে বাসায় বসে কাজ করার কোনো পরিসংখ্যানগতভাবে নির্ভরযোগ্য প্রভাব (ভালো বা খারাপ) পাওয়া যায়নি। তারা সপ্তাহে যত দিনই বাসায় কাজ করুন না কেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে এর কোনো বড় পরিবর্তন দেখা যায় না।

এর কারণ কী হতে পারে?

সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, এর পেছনে অস্ট্রেলিয়ার পারিবারিক কাঠামো এবং কাজের গতানুগতিক বিভাজন দায়ী হতে পারে। নারীরা সাধারণত ঘরের কাজ এবং অফিসের কাজের মধ্যে সমন্বয় করতে গিয়ে হিমশিম খান, তাই বাসায় কাজ তাদের স্বস্তি দেয়।

অন্যদিকে, পুরুষদের সামাজিক যোগাযোগ বা বন্ধুত্ব সাধারণত তাদের কর্মক্ষেত্র বা সহকর্মীদের কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে। বাসায় বসে কাজ করলে সেই সামাজিক মেলামেশার সুযোগ কমে যায়, যা হয়তো তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

এই গবেষণার মূল বার্তা কী?

এই দীর্ঘ বিশ্লেষণের সারসংক্ষেপ করলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে:

১. সবচেয়ে বেশি উপকৃত হন কারা?

যাদের মানসিক স্বাস্থ্য কিছুটা দুর্বল বা নড়বড়ে, তারাই দীর্ঘ যাতায়াতের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগেন এবং বাসায় বসে কাজের সুযোগ পেলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হন। কারণ, মানসিক শক্তি কম থাকলে দৈনন্দিন ছোটখাটো ধকল সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে।

২. নারীদের জন্য স্বস্তি:

দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্যের নারীদের জন্য বাসায় বসে কাজ করাটা সুস্থতার জন্য একটি বড় টনিক বা ওষুধের মতো কাজ করতে পারে।

৩. শক্তিশালী মনের মানুষেরা:

যাদের মানসিক স্বাস্থ্য বেশ শক্তিশালী বা মজবুত, তাদের ক্ষেত্রে যাতায়াত বা কাজের ধরন পরিবর্তনের প্রভাব খুব একটা পড়ে না। তারা হয়তো কাজের নমনীয়তা বা ফ্লেক্সিবিলিটি পছন্দ করেন, কিন্তু এটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর খুব বড় কোনো প্রভাব ফেলে না।

আমাদের করণীয়: আগামীর পথচলা

এই গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে কর্মী, নিয়োগদাতা এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য কিছু সুপারিশ বিবেচনা করা যেতে পারে:

কর্মীদের জন্য পরামর্শ:

অন্যের দেখাদেখি কোনো একটি পদ্ধতিকে সেরা মনে করবেন না। অফিসে যাতায়াত এবং বাসায় কাজের বিভিন্ন ধরন আপনার নিজের মানসিক স্বাস্থ্যে কেমন প্রভাব ফেলছে, তা নিজেই পর্যবেক্ষণ করুন। যদি আপনি মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভোগেন, তবে যেদিন আপনি সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন (বাসায় বা অফিসে), সেদিনই আপনার সবচেয়ে কঠিন কাজগুলো করার পরিকল্পনা করুন। নিজের সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দিন।

নিয়োগদাতাদের জন্য পরামর্শ:

কর্মীদের জন্য, বিশেষ করে যারা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সমস্যায় আছেন, তাদের জন্য নমনীয় বা ফ্লেক্সিবল কাজের সুযোগ রাখা উচিত। হাইব্রিড মডেল (বাসা ও অফিস মিলিয়ে কাজ) বিবেচনা করা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ, কারণ এটিই সবচেয়ে বেশি উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। যাতায়াতের সময়টিকেও কাজের চাপের অংশ হিসেবে গণ্য করা প্রয়োজন। সবাইকে জোর করে অফিসে ফিরিয়ে আনার মতো ‘একই নিয়ম সবার জন্য’ (One-size-fits-all) নীতি আধুনিক যুগে অচল।

নীতিনির্ধারকদের জন্য পরামর্শ:

শহরের যানজট নিরসনে এবং গণপরিবহনের সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগ করা জরুরি, যাতে যাতায়াতের সময় মানুষের মানসিক চাপ কমে। এমন আইনি কাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন যা নমনীয় কাজের ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করে। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ সবার জন্য সহজলভ্য করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

পরিশেষে বলা যায়, কাজের ধরন বদলাচ্ছে, আর সেই সাথে বদলাচ্ছে আমাদের ভালো থাকার সমীকরণ। অন্ধভাবে স্রোতে গা না ভাসিয়ে, নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কোনটি ভালো তা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

লেখাটি ভালো লেগে থাকলে আমাকে ফেসবুকে অনুসরণ করতে পারেন। এছাড়াও আমি টুইটারে এবং ইন্সটাগ্রামে সক্রিয় আছি।

নাম: Administrator

আমার নাম মেহেদী হাসান। আমি একজন শিক্ষার্থী। নিজে শিখতে এবং অপরকে শেখাতে ভালোবাসি।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করার মাধ্যমে, আপনি আমার পরিষেবার শর্তাবলী এবং গোপনীয়তার নীতি মেনে চলবেন।

MehediBOT Icon
কণ্ঠস্বর